তাহাজ্জুদ নামাজের সহজ পরিচয়, এর সঠিক সময়, আদায়ের পদ্ধতি ও রাকাতসংখ্যা।


 তাহাজ্জুদ নামাজের সহজ পরিচয়, এর সঠিক সময়, আদায়ের পদ্ধতি ও রাকাতসংখ্যা:
▬▬▬▬▬▬▬▬✿▬▬▬▬▬▬▬▬
❑ তাহাজ্জুদ নামাজের পরিচয়:
.
‘তাহাজ্জুদ’ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো: রাত্রিজাগরণ, ঘুম থেকে ওঠা, রাত্রিকালীন ইবাদত ইত্যাদি। অধিকাংশ হাদিসে এই নামাজকে “কিয়ামুল লাইল” হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। কিয়ামুল লাইল অর্থ: রাতে (ইবাদতের জন্য) দণ্ডায়মান হওয়া। কোনো কোনো হাদিসে এটাকে “সলাতুল লাইল” (রাতের নামাজ) বলা হয়েছে। 
.
❑ তাহাজ্জুদ/কিয়ামুল লাইলের সময়: 
.
(১) তাহাজ্জুদ নামাজ বা কিয়ামুল লাইলের সর্বোত্তম সময় হলো, শেষ রাত। বিশেষত রাতকে ৩ ভাগ করলে, শেষ ভাগে তাহাজ্জুদ আদায় করা সবচেয়ে উত্তম।
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আমাদের রব দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, ❝ডাকার জন্য কেউ আছে কি, যার ডাকে আমি সাড়া দেবো? চাওয়ার জন্য কেউ আছে কি, যাকে আমি দান করবো? গুনাহ থেকে মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি, যার গুনাহ আমি মাফ করবো?❞’’ [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১১৪৫]
.
রাতকে তিন ভাগ করবেন কীভাবে? মাগরিবের ওয়াক্তের শুরু থেকে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার মধ্যবর্তী পুরো সময়টিকে ৩ দিয়ে ভাগ করে ফেলুন। এরপর প্রথম দুই অংশকে বাদ দিন। পরের অংশটিই তাহাজ্জুদের শ্রেষ্ঠ সময়। যেমন: আজ ঢাকায় মাগরিবের ওয়াক্ত শুরু হয়েছে ৫টা ২৬ মিনিটে আর ফজর শুরু হবে ৫টা ২১ মিনিটে। প্রায় ১২ ঘণ্টা সময়। তাহলে, আজকের রাতের শেষ তৃতীয়াংশ শুরু হবে আনুমানিক রাত ১টা ২৪ মিনিটের পর থেকে। 
.
(২) দ্বিতীয় উত্তম সময় হলো, মধ্যরাত। অর্থাৎ আজকের রাতের হিসাব করলে ঠিক মধ্যরাত শুরু হবে আনুমানিক রাত ১১টা ২২ মিনিটের পর থেকে। এ ব্যাপারেও হাদিস আছে। দেখুন: সহিহুত তারগিব: ৭৮৬; সহিহুল জামি’: ২৯৭১। অন্য পর্বে হাদিসটি বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে, ইনশাআল্লাহ। 
.
(৩) তবে, এত জটিল মনে করার কিছু নেই। তাহাজ্জুদ বা কিয়ামুল লাইল রাতের যেকোনো সময়েই আদায় করা যায়। আল্লাহ তাঁর নবিকে বলেন, “নিশ্চয়ই আপনার রব জানেন যে, আপনি নামাজে দাঁড়ান—কখনও রাতের প্ৰায় দুই-তৃতীয়াংশ, কখনও অর্ধাংশ এবং কখনও এক-তৃতীয়াংশ এবং (এভাবেই) দণ্ডায়মান হয় আপনার সঙ্গে যারা আছে তাদের একটি দলও।” [সুরা মুযযাম্মিল, আয়াত: ২০]
.
❑ তাহাজ্জুদ/কিয়ামুল লাইল আদায়ের পদ্ধতি:
.
তাহাজ্জুদ হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নফল নামাজ। তবে, এই নামাজ আদায়ের বিশেষ কোনো নিয়ম নেই। সাধারণ সুন্নাত বা নফল নামাজের মতোই ২ রাকাত করে এই নামাজ পড়তে হয় (ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১১৩৭)। তবে, চাইলে এটি ৪ রাকাত করেও আদায় করা যায় (ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১১৪৭)। ৪ রাকাত করে আদায় করলে, জোহরের ফরজ নামাজের পূর্বের চার রাকাত সুন্নাতের মতো করে আদায় করতে হয়। বিশেষ কোনো সুরা দিয়ে বিশেষ নিয়ম অনুসরণ করে এই নামাজ পড়তে হয় না। 
.
❑ তাহাজ্জুদ/কিয়ামুল লাইলের রাকাতসংখ্যা:
.
তাহাজ্জুদের নামাজ সর্বনিম্ন ২ রাকাত থেকে শুরু করে ৪, ৬, ৮, ১০, এমনকি ১২ রাকাতও পড়া যায়। এগুলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত। [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩৫৭, ১৩৫৯, ১৩৬২ ও ১৩৬৭; ইমাম আহমাদ, আল-মুসনাদ: ২৫১৫৯; হাদিসগুলো বিশুদ্ধ সূত্রে প্রমাণিত]
.
তবে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাধারণ আমল ছিলো, তিনি অধিকাংশ সময় রাতে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। [ইমাম বুখারি, আস-সহিহ: ১১৪৭]
.
তাই, কেউ যদি প্রতি রাতেই তাহাজ্জুদ পড়েন এবং এই নামাজে অভ্যস্ত হন, তাহলে ৮ রাকাত আদায় করাকে নিজের ওজিফা (রুটিন) হিসেবে নির্ধারণ করে নিতে পারেন। এটি একটি উত্তম পদ্ধতি হবে। তবে, এটি মোটেও বাধ্যতামূলক কিছু নয়।
.
আমাদের এই সিরিজের পরের পর্বগুলোতে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা আসবে, ইনশাআল্লাহ। একটি পর্বও কেউ মিস করবেন না। সাধ্যানুসারে প্রচার-প্রসার করবেন। তাহলে অন্যরা উপকৃত হবে, এর সুবাদে নিজেরাও খুব সহজে লাভবান হতে পারবেন, ইনশাআল্লাহ। 

Nusus থেকে নেওয়া।

Sadikul Islam

"তথ্য-প্রযুক্তি" নিয়ে লেখালেখি করতে বেশি পছন্দ করি। তাই আমি উক্ত প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি করি। যাতে পাঠকরা আমার লেখা সম্পূর্ণ পড়ে বুঝতে পারে। আপনাদের দোয়ায় আমাকে সামিল রাখবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন