কিয়ামুল লাইল কীভাবে আদায় করবো?

 


যারা তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন না, তারা অন্তত “কিয়ামুল লাইল” আদায় করুন। এটি তুলনামূলক সহজ। তাহাজ্জুদের সমান না হলেও এর অনেক গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। কিয়ামুল লাইল যথার্থভাবে আদায় করার রূপরেখা তুলে ধরছি, ইনশাআল্লাহ। 
.
❑ কিয়ামুল লাইলের পরিচয়:
.
“কিয়ামুল লাইল” শব্দ দুটোর অর্থ হলো, রাতে (ইবাদতের জন্য) দাঁড়ানো বা দণ্ডায়মান হওয়া। ইবাদতের মাধ্যমে রাতে (রাতের যেকোনো প্রহরে যতটুকু সময় ইচ্ছা) জেগে থাকাকে কিয়ামুল লাইল বলে। সেই ইবাদত হতে পারে নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, যিকর, ইস্তিগফার, দু‘আ, দরুদ, ইলম চর্চা করা ইত্যাদি। অধিকাংশ হাদিসে তাহাজ্জুদ নামাজকে “কিয়ামুল লাইল” হিসেবে সম্বোধন করা হয়েছে। তাহাজ্জুদের জন্য ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া শর্ত হলেও কিয়ামুল লাইলে এই শর্ত নেই। তাই, কিয়ামুল লাইল আদায় করা অনেক সহজ। 
.
❑ কিয়ামুল লাইলের মর্যাদা ও গুরুত্ব:
.
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতের বিভিন্ন প্রহরে সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে আনুগত্য প্রকাশ করে, আখিরাতকে ভয় করে এবং তার রবের অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে... (সে কি তার সমান, যে তা করে না?)।” [সুরা যুমার, আয়াত: ০৯]
.
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘তোমাদের নিয়মিত কিয়ামুল লাইল (তাহাজ্জুদ) আদায় করা উচিত। এটি তোমাদের পূর্ববর্তী সৎকর্মশীল লোকদের অভ্যাস। এটি তোমাদেরকে তোমাদের রবের নিকট পৌঁছে দেবে। এটি ভুল-ত্রুটির মার্জনা এবং গুনাহের প্রতিবন্ধক।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ৩৫৪৯; এটি মুয়াবিয়া ইবনু সলিহের বর্ণনা, তাই হাদিসটি সহিহ। ঠিক এর পূর্বেই গত হয়েছে মুহাম্মাদ আল কুরাশির বর্ণনা; সেই হাদিসটি দুর্বল। সেটি আমরা এখানে উল্লেখ করিনি]
.
খুব ভালোভাবে জেনে রাখতে হবে যে, অধিকাংশ আলিমের মতে, রাতে ঘুম থেকে জেগে নফল নামাজ পড়লে তাহাজ্জুদও আদায় হয় আবার কিয়ামুল লাইলও আদায় হয়। কিন্তু ঘুম থেকে না জেগে ইবাদত করলে শুধু কিয়ামুল লাইল হয়; তাহাজ্জুদ হয় না। 
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবিগণের সাধারণ অভ্যাস ছিলো, তাঁরা রাতে ঘুম থেকে জেগে ইবাদত করতেন। তাই এটিই সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি। কিন্তু কেউ রাতে জাগ্রত হতে না পারলে রাতের যেকোনো সময়ে ২/৪/৬/৮/১০ রাকাত নফল পড়ে ঘুমাতে পারেন। তাহাজ্জুদের সমান না হলেও কিয়ামুল লাইল হিসেবে এর অনেক প্রতিদান পাওয়া যাবে। পাশাপাশি রাতের বেলায় কুরআন তিলাওয়াত, যিকর, দরুদ, দু‘আ, ইস্তিগফার, ইলম অর্জন ইত্যাদি নেক আমলও কিয়ামুল লাইল (রাত্রিকালীন ইবাদত) হিসেবে গণ্য হবে। তবে, হাদিসে বর্ণিত ফজিলত উপকারগুলো পরিপূর্ণভাবে পেতে চাইলে গভীর রাতে অথবা শেষ রাতে কিয়ামুল লাইল আদায় করতে হবে। না হয় শতভাগ ফজিলত পাওয়া যাবে না। 
.
❑ একটি রূপরেখা:
.
আমরা যারা শেষ রাতে ওঠতে পারি না, সেজন্য রাতের প্রথমাংশে বা ঘুমানোর আগে উত্তমরূপে কিয়ামুল লাইল (রাত্রিকালীন ইবাদত) আদায় করতে চাই, তারা মাগরিব অথবা ইশার নামাজের পর কয়েক রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিতে পারি। এরপর (অথবা ঘুমের আগে) কুরআনের কিছু অংশ তিলাওয়াত করতে পারি। বিশেষত সুরা মুলক ও সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত গুরুত্বের সাথে পড়া উচিত। কুরআন থেকে ১০০ আয়াত পড়তে পারলে সর্বোত্তম কাজ হবে। এর বিশাল ফজিলতের কথা হাদিসে এসেছে। এরপর কিছু সময় দরুদ, ইস্তিগফার ও দু‘আ করা যেতে পারে। সেটা এমনও হতে পারে যে, ২০ বার দরুদ, ৫০ বার ইস্তিগফার, ১০ মিনিট দু‘আ-মুনাজাত অথবা যেকোনো পরিমাণ। সর্বশেষ, ঘুমানোর পূর্বের আমলগুলো করতে করতে অজু অবস্থায় ঘুমিয়ে যাবো। ঘুমানোর আগে তাহাজ্জুদের জন্য জাগ্রত হওয়ার পাক্কা নিয়ত করে ঘুমাবো। তাহলে, উঠতে না পারলেও শুধু সৎ নিয়তের কারণে তাহাজ্জুদের সওয়াব পেয়ে যাবো, ইনশাআল্লাহ। 
.
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি রাতে (ওঠে) নামাজ আদায়ের ইচ্ছা করা সত্ত্বেও ঘুম তাকে পরাভূত করে দিলো (অর্থাৎ ওঠতে পারলো না), তার আমলনামায় রাতে নামাজ আদায়ের সওয়াব লিখা হবে। তার জন্য ঘুম (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সাদাকাহ (বিশেষ উপহার) হিসেবে গণ্য হবে।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৩১৪; ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ১৭৮৪; হাদিসটি সহিহ]

Nusus থেকে নেওয়া।
Sadikul Islam

"তথ্য-প্রযুক্তি" নিয়ে লেখালেখি করতে বেশি পছন্দ করি। তাই আমি উক্ত প্ল্যাটফর্মে লেখালেখি করি। যাতে পাঠকরা আমার লেখা সম্পূর্ণ পড়ে বুঝতে পারে। আপনাদের দোয়ায় আমাকে সামিল রাখবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন